ঢেলে সাজানো স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবেন- এটাই প্রত্যাশা
ঢেলে সাজানো স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবেন- এটাই প্রত্যাশা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ সামন্ত লাল স্যারকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং ডাঃ রোকেয়া সুলতানা ম্যাডামকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দানের জন্য।আমার জ্ঞান হবার পর থেকে এই প্রথম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিকিৎসক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী একসাথে দেয়া হলো। আসলে চিকিৎসা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি এবং গ্যাপগুলো কেবল মাত্র একজন চিকিৎসকের পক্ষেই ভালোভাবে বোঝা সম্ভব। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবা সিস্টেম উন্নত দেশের মতো করে গড়ে তোলা হয় নাই। যার কারনে স্বাস্থ্য সেবা নিতে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে, এক- দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত স্বাস্থ্য সমস্যা বা প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস। এগুলো হলো ছোটখাট স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন- সর্দিজ্বর, ব্যথা, কাশি, প্রেসার চেকআপ করা, ডায়াবেটিস চেকআপ করা, গর্ভবতী মায়েদের চেকআপ করা ইত্যাদি, এসব চিকিৎসা সাধারনত একজন জিপি বা জেনারেল প্র্যাকটিশনার দিয়ে থাকেন। দ্বিতীয়ত- জটিল সাস্থ্যগত সমস্যা, যেগুলোর চিকিৎসা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার করেন অথবা হাঁসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হয়।
উন্নত দেশে প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিস একটি জিপি সেন্টারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই জিপি সেন্টার তার আশেপাশের নিদিষ্ট সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ওই এলাকার মানুষ ওই জিপি সেন্টারে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, যদি জিপি সেন্টারের চিকিৎসক রোগীকে রেফার করেন তবেই ওই রোগী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারেন অথবা হাঁসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। ইমারজেন্সী চিকিৎসা এই প্রোটকলে পড়ে না, যে কেউ যখন তখন ইমারজেন্সী চিকিৎসা পাবেন। এটি অত্যন্ত সুন্দর একটি সিস্টেম। এই সিস্টেমে মানুষের হাতের কাছে, বাড়ীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন, যার কারনে চিকিৎসা ব্যয়, চিকিৎসার জন্য সময় নষ্ট কম হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা হাসপাতালগুলোতে অযাথা চাপ পড়ে না। জটিল রোগী যারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান বা হাঁসপাতালে ভর্তি হন তারা যথেষ্ট সময় ও গুরুত্ব পেয়ে থাকেন।
অন্যদিকে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই জিপি সিস্টেম নেই। মানুষ অসুস্থ হলে ঔষধের দোকান বা চিকিৎসক নন এমন মানুষের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অপচিকিতসার স্বীকার হোন, সামান্য সমস্যার জন্যও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বার বা হাসপাতালের দারস্ত হোন। এতে করে চিকিৎসা ব্যয়, জটিলতা বেড়ে যায় এবং জটিল রোগীরা পর্যাপ্ত গুরুত্ব পায় না।
আমাদের দেশে কিভাবে জিপি সিস্টেম চালু করা যাবে?
১। সর্বপ্রথম পলিসি লেভলে জিপি সিস্টেম গড়ার জন্য একমত হতে হবে।
২। আমাদের দেশের জিপি হবার জন্য নির্ধারিত কোন কোর্স নেই। জিপির জন্য কোর্স সরকারিভাবে চালু করতে হবে।
৩।জিপি সেন্টারের জন্য এলাকা নিদিষ্ট করে দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে একটি ইউনিয়নে একটি এবং শহর এলাকায় একটি ওয়ার্ডে একটি জিপি সেন্টার করা যেতে পারে।
৪। জিপি সেন্টারগুলোতে চিকিৎসার পাশাপাশি রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা (যেমনঃ রক্ত, প্রসাব, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম) করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫। জিপি সেন্টারগুলো সকাল ৯ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে।
৬। প্রাইমারী স্বাস্থ্যসেবা সবাই যেন জিপি সেন্টারে নেন সে বিষয়ে প্রচারনা করতে হবে।
৭। প্রথমদিকে উপজেলা, জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে জিপির রেফারেল নিয়ে ভর্তি করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
৮। জিপি সেন্টারগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এখানকার জিপিদের নিয়মিত প্রশিক্ষন এবং যে কোন রোগীর চিকিৎসার স্বার্থে সিনিয়র চিকিৎসকের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৯। জিপি সেন্টারের সকল রোগীর তথ্য সংরক্ষন এবং তা নিয়ন্ত্রণকারী অফিসে প্রতি মাসে প্রেরন করতে হবে।
আমাদের দেশে এখন পর্যাপ্ত চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু এখনও অসুস্থ হলে অনেক মানুষ এমবিবিএস চিকিৎসক পান না। এর প্রধান কারন হলো স্বাস্থ্য ব্যস্থার ধাপগুলো সমন্বিতভাবে গড়ে না উঠা। স্বাস্থ্য বিষয়ক এসডিজি অর্জনের লক্ষ্য হলো- সকল মানুষকে এমবিবিএস চিকিৎসক দিয়ে হাতের নাগালে প্রাইমারী স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে জিপি সিস্টেমের কোন বিকল্প নেই।
ডাঃ রতীন্দ্র নাথ মন্ডল
এমবিবিএস, এফসিপিএস (মেডিসিন)
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন
প্রাইম মেডিকেল কলেজ
প্রতিষ্ঠাতাঃ ডাক্তারখানা (জিপি সেন্টার)।